টাউনবাজারৎ। ডিম্বমূল্য রহস্য। নিঝুম ঠাকুর


 

ডিম্বমূল্য রহস্য

নিঝুম ঠাকুর


যা ঘটে গেছে

পাকড়াশিবাবু দিনবাজারে ডিম কিনতে গিয়ে মঙ্গলময় লাইকে দেখে ডিম ছেড়েই পালিয়ে ছিলেন। দোকানে লুকিয়ে চা পান করার পর চুপিচুপি বেরিয়ে কিছুক্ষণ পর ডিমের দোকানে গিয়ে একপাতা ডিম নিয়ে সটকে পড়েছিলেন।

 

আজকে আবার কদমতলা মিউনিসিপ্যাল মার্কেটে পাকড়াশিবাবুর সাথে দেখা। পাকড়াশিবাবু বললেন, 'বুঝলেন ভূতুমবাবু, এই বাজারটাই এখনো নিরাপদ। ব্যাটাচ্ছেলে মঙ্গলময় লাই মনে হয় এই বাজারে চট করে হানা দেবে না। তবে এখানে বড় অসুবিধা যে সব্জির ভ্যারাইটি খুব কম আর দামও অন্যান্য বাজার থেকে তুলনায় বেশী। তবে মাছটা সেই তুলনায় একটু ভালো। ইয়ে ভূতুমবাবু চলুন দুলালের দোকানে চা খাই, ইয়ে বাজার করার তাড়া নেই তো আপনার?'

আমি মনে মনে ভাবলাম, ‘আপনি চা খাওয়াবেন তাতে আমার কেন তাড়া থাকবে ! আর আমার অত তাড়াও নেই।  তাই তাড়াতাড়ি বললাম- না না আজকে আমার অত তাড়া নেই, চলুন।’

দুলালের দোকানে চা খেতে খেতে পাকড়াশিবাবু বললেন, 'বুঝলেন ভুতূমবাবু, এই মঙ্গলময় লাইয়ের যন্ত্রণায় এইভাবে লুকিয়ে বাজার করা কাঁহাতক সহ্য করা যায়? যতদূর শুনেছি উনি গল্পগুলো পড়ে দেখেন না।দেখা হলেই বলেন গল্প দেন আর বই কিনুন। তা আমি সেদিন ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখলাম আমি মোপাঁসার একটা বিখ্যাত ছোট গল্প ওনার 'গিরিশিরা' পত্রিকায় পাঠিয়েছি আর উনি ওটা ছেপে দিয়েছেন।আর গল্পটা পড়ে অনেক তরুণ, প্রবীণ পাঠক-পাঠিকা, লেখক, কবি কী হেনস্থাই  না করলে! তার পরেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। ভাবছি, আবার এ রকম করলে আমি স্বপ্নে দেখা ফর্মুলা ঝেড়ে দেব।’

চা খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। বললাম, ‘চলুন বাজার করা যাক!’ 

বাজারে ঢুকে প্রথমেই পাকড়াশিবাবু একটা লম্বা লাউ কিনলেন ত্রিশ টাকা দিয়ে। তারপর এগোলেন ডিম কেনার জন্য। পাশাপাশি দু'জন ছেলে ডিম নিয়ে বসেছে। দু'জনকেই আমি চিনি,ওরা দুই সহোদর ভাই।বড়টার নাম বিনোদ ছোটটার নাম ছটুয়া। ছটুয়া জেদ করে বসেছে বিনোদের ডিমের ব্যবসা খতম করার জন্য। ছটুয়া আমাকে বলেছিল -কাকু বিনোদের ডিমের ব্যবসা আমি ডিম দিয়েই খতম করে ছাড়ব।আমাকে বলে তুই ব্যবসা করতে পারবি না! আমার বয়স হয়নি? ছটুয়ার ডিমের রঙ লালচে। আমি ছটুয়ার লাল ডিমের রহস্য জানি। পোল্ট্রির সাদা রঙের ডিম গুলোকে রাত্রে চা-পাতা ফোটানো জল ঠান্ডা করে ওই সাদা ডিমগুলো সেই চাপাতা ফোটানো ঠান্ডা জলে সারা রাত ডুবিয়ে রাখে, সকালে সুন্দর লালচে রঙের ডিম হয়ে যায়।

সেই ডিম ছটুয়া বেশী দামে বিক্রি করে।

পাকড়াশিবাবু বিনোদকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ডিম কত করে খোকা?'

'পাঁচটাকা করে কাকু।'

সঙ্গে সঙ্গে ছটুয়া বলে উঠল, 'কাকু ওর ডিম কিনবেন না, ওর ডিম ভালো না আর দাম বেশী।

আমার এই ডিম নেন খুব ভালো ডিম। আমি চার টাকা করে দেব।’

পাকড়াশিবাবু ছটুয়ার ডিম নেওয়ার জন্য ঝুঁকতেই আমি পাকড়াশিবাবুকে খোঁচা মারলাম।পাকড়াশিবাবু আমার দিকে তাকাতেই আমি ইশারা করলাম একটু সরে আসতে। তিনি সরে আসতেই ছটুয়ার ডিমের লালচে রঙের রহস্য বললাম। শুনে পাকড়াশিবাবু আঁৎকে উঠলেন। বললেন, ‘এরকম হয় নাকি মশাই?'

‘আমার নিজের চোখে দেখা।’ আমি বলি। দুই ভাইয়ের রেষারেষির কথাও বলি।

সব শুনে পাকড়াশিবাবু বললেন, ‘দূর মশাই! আজকে আর ডিমই কিনব না। দেখি অন্য বাজার গুলো সেরে ফেলি আর হ্যাঁ, আপনি তাড়াতাড়ি বাজার সেরে দুলালের দোকানে আসুন আর এক রাউন্ড চা খেয়ে বাড়ি ফেরা যাবে।'

বলে পাকড়াশিবাবু মাছের বাজারে ঢুকলেন আমি টুকটাক সব্জি কিনে দুলালের দোকানে অপেক্ষা করতে লাগলাম -দেখি পাকড়াশিবাবু কখন আসেন। একটু পরেই দেখি পাকড়াশিবাবু কাঁধে লম্বা লাউটা নিয়ে দুলালের দোকানের দিকেই আসছেন।

 

আবার পরের সংখ্যায়

 

সূচিপত্রে যাওয়ার সূত্র 

 

 

Comments

Popular posts from this blog

ছবিতে নারী এবং নারীর ছবিঃ শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়। অষ্টম পর্ব।

টৌন জলপাইগুড়িঃ সুয়ো স্টেশন দুয়ো স্টেশন

গোসানী মঙ্গল অবলম্বনে 'তথাস্তু': রঙ্গন রায়। তৃতীয় পর্ব।